গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় সাতজন জাপানি নিহত ও একজন আহত হওয়ার ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। তবে এই হামলার পরও বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে সব সময় পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে সংস্থাটি। তবে জাইকার কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত রাখা হবে।
গত বুধবার জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকার এ বিবৃতি সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়।
জাইকার প্রেসিডেন্ট বলেন, ঢাকা শহরের যানজট পরিস্থিতি উন্নয়নে জাইকার পক্ষ থেকে একটি অবকাঠামো প্রকল্পের জরিপে অংশ নিয়েছিলেন ওই আটজন জাপানি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যাঁরা বাংলাদেশের উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করছিলেন, তাঁরাই এই মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হলেন। যারা এ ধরনের সন্ত্রাসবাদে জড়িত, তাদের প্রতি রাগ সামলে রাখা অসম্ভব।
বিবৃতিতে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনা করে তাঁদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান জাইকার প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে জাইকার পক্ষ থেকে সব পরিবারের সদস্যদের প্রতি যতটা সম্ভব সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।
শিনিচি কিতাওকা বলেন, ‘যাঁরা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাঁরা শুধু বাংলাদেশে জরিপকাজেই অংশগ্রহণ করেননি, একই সঙ্গে জাইকার সঙ্গে তাঁরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধিতেও অবদান রাখেন। তাঁরা বেঁচে থাকলে আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন। কিন্তু এটা আমাদের জন্য অনেক দুঃখের ব্যাপার যে এই মূল্যবান প্রতিভাদের হত্যা বা আহত করা হয়।’
গত অক্টোবরে বাংলাদেশের রংপুর জেলায় একজন জাপানিকে হত্যা করা হয়। তখন জাইকার কর্মীদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয় এবং তাঁদের সতর্ক করা হয়েছিল। সম্প্রতি তাঁদের আবারও অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে পবিত্র রমজানের সময় ও এর পরে। সেই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই ফলাফল বেশ দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শিনিচি কিতাওকা জানান, ‘জাইকা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি আমরা অব্যাহত রাখব। যেখানে আমরা কাজ করব, সেখানে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিস্থিতি মূল্যায়নের চেষ্টাও থাকবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে সচেষ্ট থাকব।’
মোদি-শিনজো আবের ফোন: এদিকে গুলশানের জঙ্গি হামলার বিষয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচারিত তথ্যে জানানো হয়েছে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদ দমনের পাশাপাশি এ ধরনের বিয়োগান্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা সন্ত্রাসবাদ দমনে ন্যূনতম ছাড় না দেওয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় তথ্য বিনিময়ের পাশাপাশি একে অন্যকে সহযোগিতা করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
ওবামা চিঠি দিলেন আবেকে: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গুলশানের বিয়োগান্ত ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গত শুক্রবার চিঠি দিয়েছেন। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, বারাক ওবামা সন্ত্রাসী ওই হামলার কঠোর নিন্দা জানান। যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় জাপান, বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার করেছেন বারাক ওবামা।