অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাজ্যকে বিশেষ ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ কূটনীতিকদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রস্তাব করা হচ্ছে যে ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার ঠেকাতে যুক্তরাজ্যকে সর্বোচ্চ সাত বছরের জন্য জরুরি বিরতি (ইমারজেন্সি ব্রেক) আনার ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য ইইউর মুক্তবাজারের সুবিধাও চালু রাখতে পারবে।
আজ রোববার ইংরেজি দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ সুবিধা দিয়ে হলেও যুক্তরাজ্যকে ইইউ জোটের সঙ্গে রাখতে ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিকদের মধ্যে আলোচনা চলছে। চলমান আলোচনা সফল করতে গেলে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকেও নিশ্চয়তা দিতে হবে যে ইতিমধ্যে যেসব ইইউ নাগরিক যুক্তরাজ্যে বসতি গড়েছে, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে না। যুক্তরাজ্য ইইউ তহবিলে অনুদান অব্যাহত রাখবে, যা আগের সদস্য ফির চেতে হয়তো কিছুটা কম হতে পারে।
এর ফলে যুক্তরাজ্যের মানুষের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের যে দাবি, তা পূরণ যেমন অনেকটা সম্ভব হবে, তেমনি ইইউর বন্ধন অটুট রেখে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা ও সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইইউ পার্লামেন্টের উদারপন্থী একটি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হল্যান্ডের সরকারি দলের এমপি (ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য) নতুন এই প্রস্তাব নিয়ে দেনদরবারের কাজটি করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত ২৩ জুন অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে রায় দেয়। ওই রায়ের পর ইইউ নেতারা যুক্তরাজ্যকে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, সম্পর্ক ছিন্ন করার আনুষ্ঠানিক আবেদন জানানোর আগ পর্যন্ত (আর্টিকেল ফিফটি বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো) তাঁরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবে না। সর্বশেষ গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে দেখা করতে গেলে ইইউর দুই প্রভাবশালী নেতা জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। কিন্তু নতুন এই প্রস্তাব তৈরির চেষ্টা থেকে স্পষ্ট যে উভয় পক্ষের নেতারা সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ঠিকই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মূলত অভিবাসীদের অবাধ প্রবেশ ঠেকাতেই যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউ ছাড়ার পক্ষে রায় দেয়। ইইউর অন্যতম মূলনীতি হলো ইইউর একক বাজারের (শুল্কমুক্ত বাজার) সুবিধা ভোগ করতে হলে, ইইউ নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকারও দিতে হবে। কিন্তু যুক্তরাজ্য চায় একক বাজারের সুবিধা ধরে রাখতে। আবার যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ ইইউর অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক রাজনীতির জন্যও মঙ্গলজনক হবে না। এ জন্য সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ নিয়ে উভয় পক্ষের নেতাদের মধ্যে মধ্যবর্তী কোনো অবস্থানে পোঁছানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
ইইউর সদস্যপদ রাখার পক্ষে প্রচার চালানো প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারবার বলেছেন, ‘ব্রেক্সিট মানে হলো ব্রেক্সিট।’ এখন ইইউ-বিরোধীরা ব্রেক্সিটের পূর্ণ বাস্তবায়নই দেখতে চায়। সাত বছরের ‘জরুরি বিরতি’ আনার ক্ষমতায় তাঁরা সন্তুষ্ট হবে না বলে বিতর্ক উঠেছে।