ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার প্রশ্ন ঘিরে কয়েক মাস আগে যে বিতর্ক উত্তাল করেছিল ভারতকে, সেই প্রশ্নই এবার তুলে ধরল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, গরু ও গো-মাংসকে কেন্দ্র করে ভারতে যে অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা মাথাচাড়া দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাতে উদ্বিগ্ন।
দৃশ্যত কিছুদিনের বিরতির পর বিজেপিশাসিত ভারতে গো-রক্ষা আন্দোলন নতুন করে চাঙা হচ্ছে। এক শ্রেণির হিন্দুত্ববাদীর হাতে সম্প্রতি গরুকে কেন্দ্র করে মুসলিম এমনকি নিম্নবর্ণের হিন্দুদের হয়রানি ও লাঞ্ছিত করার পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কারবি এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘এ ধরনের অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতায় আমরা বাস্তবিকই উদ্বিগ্ন। আমরা চাই ভারত সরকার তার নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করে অপরাধীদের কড়া শাস্তি দিক। ধর্মীয় আচার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং অসহিষ্ণুতার মোকাবিলায় ভারতের জনগণ ও সরকারের পাশে আমরা দৃঢ় সমর্থন নিয়ে আছি।’
বিজেপি গত সাধারণ নির্বাচনে ভারতের ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশে গো-রক্ষা আন্দোলন তীব্র হয়েছে। সেই সঙ্গে বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে চালু হয়েছে গো-হত্যা ও গো-মাংস নিষিদ্ধ আইন। এ নিয়ে অশান্তি লেগেই আছে। গত বছর দিল্লির লাগোয়া উত্তর প্রদেশের দাদরিতে বাড়িতে গো-মাংস পাওয়ার অভিযোগে এক মুসলিম পরিবারের ওপর মারাত্মক হামলা চালানো হয়। আকলাখ আহমেদ নামে ওই বাড়ির প্রবীণ গৃহকর্তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন স্থানীয় লোকজন। সেই থেকে প্রায়ই মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে অশান্তি লেগেই আছে।
সম্প্রতি দুটি ঘটনায় নতুন করে শুরু হয়েছে অসহিষ্ণুতা বিতর্ক। গরু মেরে তার চামড়া ছাড়ানোর অভিযোগে বিজেপিশাসিত গুজরাটে দলিত সম্প্রদায়ের চারজনকে নগ্ন করে গাড়ির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়। অত্যাচারের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সংসদ উত্তাল হয়ে ওঠে। কদিন পরই মধ্য প্রদেশের এক ট্রেন স্টেশনে দুই মুসলিম নারীকে পুলিশের সামনেই মারধর করা হয়। অভিযোগ, তাঁদের কাছে গরুর মাংস পাওয়া গেছে। যদিও তদন্তে দেখা যায়, তাঁদের কাছে থাকা মাংস ছিল মহিষের।
গুজরাটে দলিত-নিগ্রহের রেশ সেই রাজ্যে নতুন সংকটের জন্ম দিয়েছে। গরুর চামড়া ছাড়ানোর কাজ এ দেশে যাঁরা করেন, তাঁরা প্রায় সবাই হয় মুসলমান অথবা দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। গুজরাটের দলিতরা নিগৃহীত হওয়ার পর তাঁরা সেই কাজ করা বন্ধ রেখেছেন। রাজ্যের চর্মকারদের এই সিদ্ধান্তের ফলে শুরু হয়েছে নতুন প্রশাসনিক সংকট। বাড়ছে উত্তেজনাও। এমনিতেই গো-হত্যা নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশের চামড়াশিল্প বিপন্ন। পাশাপাশি মাংস রপ্তানিও মারাত্মক কমে গেছে। গো-রক্ষার নামে রাজ্যে রাজ্যে উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলোর দাপাদাপিতে সহিংসতাও বেড়ে চলেছে।
কাঁচামালের (চামড়া) অভাবে ভারতের জুতাশিল্প ধুঁকছে। সমাজের প্রান্তিক মানুষজন, যাঁরা এই শিল্পগুলোর সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের রুজি-রোজগারে টান পড়েছে। অথচ দলগতভাবে বিজেপি কিংবা সরকার এই সমস্যা মেটাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। এ প্রেক্ষাপটেই উদ্বেগ প্রকাশ করল যুক্তরাষ্ট্র।