চট্টগ্রামের ট্রাফিক বিভাগের মতো দুর্বল বিভাগ দেশের আর কোথাও নেই বলে মন্তব্য করেছেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, এখানকার ট্রাফিক ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। চট্টগ্রাম নগরের যানজটের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
‘বন্দর-পতেঙ্গা এলাকার যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) যৌথভাবে নগরের সার্কিট হাউসে এ সংলাপের আয়োজন করে।
যানজটের কারণে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানান মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, নগরের যানজটের অবস্থা এখন ভয়াবহ। আগে এ রকম ছিল না। যানজট নিরসনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বাস ও ট্রাকচালকেরা আইন মানতে চান না। রাস্তার ওপর ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান রেখে দেন। অনেক সময় এমনভাবে গাড়ি রাখেন, অন্য গাড়ি যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। পুলিশের লোকজন বক্সের মধ্যে বসে থাকে। পুলিশের বিরুদ্ধে বেশি বলা যাবে না। পুলিশ কী করে, না করে তা আমরাও দেখি, আপনারাও দেখেন।’ তাঁর মতে, পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে যানজট অনেকটাই নিরসন হয়ে যেত।
জেলা প্রশাসকের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ উল হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নগরের সৃষ্ট যানজটের দায় ট্রাফিক বিভাগের একার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। নগরের সড়ক ও উড়ালসড়ক নির্মাণ ও পরিকল্পনার সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। শুধু আইন প্রয়োগের কাজটিই করে এ বিভাগ।
গতকালের সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, অননুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তদারক করে না সিডিএ। ভবন, হাসপাতাল ও বিপণিবিতানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে কি না, তা তদারক করা হয়নি। এটি করা দরকার। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের মেয়র যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পতেঙ্গা এলাকায় বেসরকারি কনটেইনার ডিপো স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যারা করেছে, তারা অনেক পাওয়ারফুল। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে বরাদ্দ পেয়েছে। এতে গুটি কয়েক মানুষের লাভ হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি, কোনো রাজনৈতিক সরকার এ ধরনের কাজ করবে না। যেটি করেছে, সেটি অন্যায়।’
নাগরিক সংলাপে ‘প্রসঙ্গ: বন্দর-পতেঙ্গা এলাকার যানজট ও জলাবদ্ধতা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর প্রধান প্রতিবেদক ভূঁইয়া নজরুল। প্রবন্ধে তিনি বলেন, যানজট নিরসনে ইপিজেডে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য চারটি গেট চালু করা যেতে পারে। সড়কের ওপর চাপ কমানোর জন্য রেললাইননির্ভর এলাকায় বেসরকারি কনটেইনার ডিপো গড়ে তোলা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা ও খাল খনন করে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।
ক্যাবের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার ও আবিদা আজাদ, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জেরিনা হোসেন ও সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, বন্দর-পতেঙ্গা এলাকাবাসীর পক্ষে শাহ আমানত উল্লাহ, সিদ্দিকুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হলে সিটি করপোরেশনের অধীনে একটি শক্তিশালী পরিকল্পনা বিভাগ থাকতে হবে। নগরের যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে যা করা হচ্ছে তা অ্যাডহক ভিত্তিতে। এতে দীর্ঘস্থায়ী সুফল মিলবে না।