বরিশাল নগরের সেন্ট পিটার চার্চের প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো পুকুরটির ভরাট বন্ধ করার দাবিতে আয়োজিত মানবন্ধন কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছেন আইনজীবীরা। গতকাল শনিবার ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকায় চার্চের সামনে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীরা মানববন্ধনে ব্যবহৃত ব্যানার ফেস্টুন ছিনিয়ে নেন এবং মাইক ভাঙচুর করেন।
হামলায় বেশ কয়েকজন নারীসহ ১২ জন আহত হন। পরে নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় আদালত ভবনের পাশে সেন্ট পিটার চার্চের মালিকানাধীন প্রাচীন পুকুরটি ভরাট করে জেলা আইনজীবী সমিতি। বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আনিসউদ্দিন আহম্মেদ দাবি করেন, পুকুরের জমিটি সরকারি। তিনি দাবি করেন, খ্রিষ্টান সম্প্রদায় মানববন্ধনের নামে আইনজীবীদের ভূমিদস্যু বলেছে। এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। এ সময় আইনজীবীরা নয়, বরং খ্রিষ্টান সম্প্রদায় আইনজীবীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বেলা ১১টায় পুকুর ও সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সেন্ট পিটার্স চার্চের সামনে মানববন্ধনের জন্য দাঁড়ান। হঠাৎ জেলা আইনজীবী সমিতি ও পুকুর ভরাট তদারক করা আইনজীবীরা এসে সেখানে হামলা চালান। আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ফয়েজ আহম্মেদ, আইনজীবী দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি দল ওই হামলায় ছিলেন।
আহত সারা বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা মানববন্ধনের জন্য কেবল সড়কে দাঁড়িয়েছি। এমন সময় আইনজীবীরা আমাদের ওপর হামলা চালান। তাঁরা আমাদের মারধর করেন।’
আলো হালদার বলেন, ‘হামলাকারীরা এসেই তাঁকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে আমরা চার্চের মধ্যে ঢুকে পড়লে সেখানেও তাঁরা হামলা চালায়।’
এ ঘটনার পরপর সাড়ে ১১টায় অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। এ সময় সমাবেশে হামলা এবং মারধরের ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। একই সঙ্গে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
সমাবেশে সেন্ট পিটার্স চার্চের সভাপতি রেভারেন্ড শান্তি মণ্ডল অভিযোগ করেন, পুকুর ভরাট বন্ধ এবং চার্চের সম্পত্তি রক্ষা করার দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছেন আইনজীবীরা। পুলিশের অনুমতি নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ালেও পুলিশ হামলা ঠেকাতে পদক্ষেপ নেয়নি।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের বিভাগীয় সভাপতি নরবার্ট নিপু অধিকারী, ক্যাথলিক চার্চের ফাদার রিংকু গোমেজ, অক্সফোর্ড মিশনের ব্যবস্থাপক বেনিডিক্ট বিমল বেপারী, ক্যাথলিক চার্চের পরিচালক প্রেমানন্দ বিশ্বাস, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সমন্বয়ক লিংকন বায়েন প্রমুখ।
এ ব্যাপারে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘তাঁরা অনুমতি নিয়েই মানববন্ধন করতে যান। এ সময় আইনজীবীরা তাঁদের বাধা দেন। পরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাঁরা কর্মসূচি পালন করেন।’