রনি অাহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মেহেরপুর জেলা কারাগারে নানা দুর্নীতি ও বন্দি নির্যাতনের অভিযোগে জেলার মো. শেখ আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে আরো তিন কারারক্ষীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন প্রধান কারারক্ষী আলামিন হোসেন, কারারক্ষী সোলাইমান হোসেন ও মামুন হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কারাগারে বন্দি মো. শাহীর ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেরপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম-১ সানা উল্লাহ মিয়ার আদালতে এ মামলা করেন।
মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে, জেলার আকতার হোসেনসহ মামলার অন্য আসামিরা বেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারী হওয়ার পরও পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে বন্দিদের মধ্যে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করেন। তাঁরা বন্দিদের ফাইল কাটা বাবদ ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া, জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামিদের কাগজে ভুল আছে বলে বন্দিদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা, কয়েদি বন্দিদের পাহারা ও ম্যাট বানানোর জন্য এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়া, বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অফিস কল বাবদ বন্দিপ্রতি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া, বাইরের কারা ক্যান্টিনে বন্দিদের আত্মীয়স্বজনদের আনা মালামালের ব্যাগপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া, বাইরের কারা ক্যান্টিনের মালামাল বিক্রি হোক বা না হোক ক্যান্টিন ম্যানেজারের কাছে থেকে মাসিক ২২ হাজার টাকা আদায়, বন্দিদের সাক্ষাৎপ্রার্থী ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্লিপপ্রতি ১০ টাকা করে আদায়, ওকালতনামা স্বাক্ষর করতে ৫০ টাকা নেওয়া, কারাগারের ভেতরের ক্যান্টিন থেকে বন্দিদের খাবার কিনতে বাধ্য করা, অতিরিক্ত মূল্যে খাবার বিক্রি করা, বন্দিদের কম পরিমাণ খাবার দেওয়া এবং বিভিন্ন বন্দির কাছ থেকে সাপ্তাহিক, মাসিক বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা হিসেবে গ্রহণ করে কারাগারের ভেতরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে আসামিরা বাদীর ভাই কারাবন্দি মো. শাহীকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন প্রায় সব সময় শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।
চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে গত ২৭ সেপ্টেম্বর আসামিরা মো. শাহীকে বেদম প্রহার করে। ১ নম্বর আসামি জেলার আকতার হোসেনের নির্দেশে অন্য তিন আসামি শাহীর তলপেটে বুট দিয়ে পিষে মারাত্মক জখম করে। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে রক্তবমি করতে থাকেন এবং তাঁর কিডনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শাহীকে গোপনে দ্রুত যশোর জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন তাঁরা। বর্তমানে সেখানে শাহী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৮৪/৩৮৫/৩৮৬/৩২৩/৩২৫/
৩০৭/৩৪ ধারামতে অপরাধ আমলে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুবিচারের আবেদন জানান বাদী মনিরুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এহান উদ্দিন মনা বলেন, বিচারক মামলার নথি পর্যালোচনা করে মামলাটি আমলে নিয়েছেন।