আফতাব হোসেন
দিন দিন বাড়ছে তুলার চাষ। ধান, আলু,তামাকের চেয়ে ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় তূলা চাষে ঝুঁকছে ঊত্তরাঞ্চলের কৃষক । ঊচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ, প্রশিক্ষন, ঊপকরণ ও আর্থিক সহায়তায় ঊৎপাদন হচ্ছে দ্বিগুন।খরচের চেয়ে লাভ দ্বিগুন পাওয়ায় বাড়ছে চাষ। ৫ বছরে ৬ গুন হয়েছে উৎপাদন। প্রতি মনের দাম ২ হাজার টাকার বেশি হওয়ায় তুলা চাষে সুদিন ফিরছে উত্তরাঞ্চলের কৃষকের ।
শিল্প বিপ্লবের আগে এ দেশ বিশ্বে মসলিন কাপড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। দেশের মসলিন কারিগরদের প্রণোদনা এবং তুলা ও বস্ত্র উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার গঠন করেন তুলা উন্নয়ন বোর্ড। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৭৪ সাল থেকে দেশে তুলা উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু উচ্চ ফলনশীল জাতের অভাবে ফলন কম ও খরচের চেয়ে লাভ বেশি না হওয়ায় তুলা চাষে আগ্রহ হারান চাষীরা। আশার কথা তামাকের চাষ কমায় এবং ধান ও আলু চাষে দিন দিন লোকসান হওয়ায় উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলা চাষে দ্বিগুন লাভে ক্রমেই আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের।
৫ বছর আগেও উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় যেখানে তুলা চাষ হতো মাত্র ৪ হাজার হেক্টরে উৎপাদন ছিল মোটেই ৭ হাজার বেল। যা বর্তমানে দ্বিগুন ৮হাজার হেক্টরে চাষ বৃদ্ধি পেয়ে ফলন হবে ৪০ হাজার বেল। এই উজ্জল সম্ভাবনায় আগামীতে চাষ বাড়িয়ে ১লাখ বেল উৎপাদনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড জানালেন উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ নাসির উদ্দিন আহমেদ।
বার বার একই জমিতে একই রকম সেচ নির্ভর ফসল চাষে পানির বেশি ব্যাবহারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং মাটির গুনাগুন,খনিজ পদার্থ কমে যাওয়ায় ফসল হানি ও উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে টেকসই কৃষি ও পরিবেশের উন্নয়নে সরকারী,বে-সরকারী নানা উদ্যোগে তুলা চাষে ঘটছে যুগান্তকারী পরিবর্তন জানালেন প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জিল্লুর রহমান। তিনি জানান,প্রতিবিঘা ধান চাষে পানি লাগে সাড়ে ৩ হাজার লিটারের উপরে,সেখানে এক বিঘা জমিতে তুলা চাষে পানি লাগে মাত্র ৫/৭শ লিটার।
রংপুরের তিস্তা নদীর বিস্তিৃর্ন চরাঞ্চল গংগাচড়া,কাউনিয়া,আদিতমারী,কালিগঞ্জ এবং জেলার বদরগঞ্জ,তারাগঞ্জ,পীরগঞ্জ ও রংপুর সদরের যেদিকে চোখ যায় শুধুই তুলার ক্ষেত। এসব জমির অধিকাংশই বালু ও পরিত্যাক্ত। কোথাও কেথাও আলু ,তামাক ও ভূট্টার চাষ হতো। বন্যা Ñ দূর্যোগে ফসল হানি ও লোকসান হওয়ায় এবং তুলা চাষে খরচের চেয়ে ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় লাভবান হওয়ায় খুশি চাষীরা। সেই প্রত্যয়ের কথা উঠে আসলো নদী চরাঞ্চলের কৃষক আসাদ,দাজু,রফিক সহ তুলা চাষিদের মুখে। হারাগাছের সারাই ইউনিয়নের তুলা চাষী আসাদ জানালেন,গত বছর ১২ দোন ( ২৪ শতকে=১ দোন) জমিতে তুলা চাষ করে লাভ পাওয়ায় এ বছর ৪৭ দোনে তুলা করেছি,ফলন হবে প্রতি বিঘায় ১০-১২ মন। এতে বিঘা প্রতি ১২-১৪ হাজার টাকা খরচ হয়ে লাভ হবে দ্বিগুন। এর আগে তিনি এসব জমিতে আগে তামাক ও পরে আলু এবং ভুট্টা চাষ করে তেমন লাভ না পাওয়ায় আগামীতে আরও বেশি জমিতে তুলা চাষ করবেন। এজন্য জমি লিজ খুজছেন।একই কথা জানালেন,একই এলাকার দাজু,রফিক সহ অন্যরা। তারা জানান,তুলা তুলতে ৬ মাসের বেশি সময় লাগে। এছাড়া অতিবৃষ্টিতে পচন রোগ বালাইতে এবছর কীটনাশক প্রয়োগে খরচ কিছুটা বেশি হওয়ায় লাভের পরিমান কিছুটা কম হবে। তবে তুলা বোর্ডের ইউনিট অফিসার আব্দুল মান্নান উন্নত বীজ,প্রশিক্ষন,উপকরণ,সার,কীটনাশক সরবরাহ করায় তুলা চাষে সহযোগীতা পাওয়ায় এর সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে।
দেশে বস্ত্রখাতে তুলার মোট চাহিদা ৪২ লাখ মেট্রিকটন। আর সারা দেশে বর্তমানে তুলার উৎপাদন হচ্ছে দেড় থেকে ২ লাখ মেট্রিকটনেরও কম। তাই জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলা,স্বল্পমেয়াদি ও রোগবালাই প্রতিরোধী হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন এবং তুলা চাষে প্রনোদনা বাড়ালে এক্ষেত্রে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলবে বলে আশা চাষী ও বিশেষজ্ঞদের।
আফতাব হোসেন: সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও প্রতিনিধি বৈশাখী টেলিভিশন, রংপুর