রনি অাহমেদঃ জন্ম থেকেই দুই হাত নেই মুরসালিন হোসেনের। তবুও হাল ছাড়েনি সে, হাত না থাকলে লেখাপড়া করতে তো আর মানা নেই। তাই সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা গ্রহণ করে পঙ্গুত্বের অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করার। সেই প্রত্যয়ে এ বছর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দৌলতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে মুরসালিন। উপজেলার দৌলতপুর ইউপির দৌলতখালী বড়ভুইপাড়া ব্রাক স্কুল থেকে সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
দৌলতখালী চোহদ্দিপাড়া গ্রামের দিনমজুর মিজানুর রহমানের ছেলে মুরসালিন। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। একদিকে দরিদ্র অন্যদিকে দুই হাত নেই। তাই কোন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার বাবা মা পড়াতে সাহস পায়নি। ছেলের পড়ালেখার আগ্রহ দেখে বাড়ি সংলগ্ন ব্রাকস্কুলেই তাকে ভর্তি করে দেন। ব্রাকস্কুল থেকে প্রাথমিকের পড়াশোনা শেষ করে অবশেষে মুরসালিন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে। বড়ভুইপাড়া ব্রাক স্কুলের শিক্ষিকা পাপিয়া খাতুন জানান, মুরসালিনের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে তাকে ঐ স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। তার স্বরণশক্তি ভাল এবং পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। মুরসালিনের মা হিরা খাতুন বলেন, গর্ভে থেকেই দুই হাত বিহীন জন্ম নেয় মুরসালিন। বহুকষ্টে তাকে দিনদিন বড় করে তোলা হচ্ছে। হাটাচলা ছাড়া তার সমস্ত কাজ সে তার মায়ের সাহয্যেই করে থাকে। তার মা জানান, অভাবের সংসারে দু-বেলা দু-মঠো ভাত যোগাতে হিমসিম খেতে হয়। তাই ছেলের লেখাপড়ার খরচ ও জামা কাপড় দিতে পারিনা। আবার ছেলের লেখাপড়ার ইচ্ছাশক্তিকেও ফেলতে পারছিনা। তাই ভবিষ্যতে কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। মুরসালিন জানায়, তার পরীক্ষা ভাল হচ্ছে। এবং ফলাফল ভাল হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নুল আবেদিন জানান, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যে সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে মুরসালিন কে সেভাবেই দেখা হচ্ছে।