শহরতলীর একটি ইউনিয়নের নাম কাশিপুর । বরিশাল শহর থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দূরের পথ। এখন অবশ্য কাশিপুর বরিশাল সিটি করপোরেশনের অংশ। ২৫ বছর আগের কথা। সেখানের মেয়ে শিশুদের জন্য কাছাকাছি কোন হাইস্কুল ছিলনা।
আবার লেখাপড়ার জন্য মেয়েদের দূরে পাঠাতে আপত্তি ছিল অভিভাবকদের। এই সমস্যা দূর করতে সে সময় এগিয়ে এলেন সেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আফতাব হোসেন। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন কাশিপুর গার্লস হাইস্কুল। মাত্র ১৩ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু। এলাকাবাসী স্কুলটির উন্নতির জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করলেন তাকে। ধীরে ধীরে ছাত্রী বাড়তে শুরু করলো। এবার মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজের প্রয়োজনের কথা ভাবনায় এলো তাদের। এই ভাবনা বাস্তবায়ন হলো ২০০৯ সালে। কাশিপুর গার্লস হাইস্কুল উন্নীত হলো কাশিপুর গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজ’এ। বর্তমানে সেখানে সাত শতাধিক ছাত্রী রয়েছেন । ওই কলেজ থেকে পাস করা মেয়েরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন। চাকুরী করছেন বড় বড় সব পদে।
আজ ৩ জানুয়ারি কাশীপুর গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজের রজতজয়ন্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে । বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বরিশাল- ১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য তালুকদার মো.ইউনুস,পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমীন ,জেলা প্রশাসক ড.গাজী মো.সাইফুজ্জামান,শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক,বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সম ইমানুল হক।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মো. আফতাব হোসেন ২৫ বছর পার করে আসা কষ্টের কথা বলতে গিয়ে জানান,এলাকার গরীব মানুষের মেয়েরাই এই স্কুলের প্রাণ। বেতন দিতে পারতো না তারা। কারও অভিভাবক ছিলেন ভ্যানচালক। কারো মা বাজারের দোকানে পানি দেন। তিনি স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন তারা একরকম বিনা বেতনে কাজ করে এসব শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন। স্কুলটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষকরা স্বচ্ছলতার মুখ দেখেন। তারপরেও কলেজ শাখার শিক্ষকরা একইভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের জন্য। পরীক্ষার ফলাফল অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশী ভালো জানিয়ে কলেজ শাখাকে এমপিওভুক্ত করার আবেদন করেন তিনি। সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ,জেলা প্রশাসক, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এই ব্যাপারে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন।
রজতজয়ন্তির এই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এলাকাবাসীরাও অংশ নেন।