দৌলতপুরের বিশিষ্ট শিক্ষা বিদ ও শিল্প পতি ডাঃ মোঃ ফজলুল হকের জানাজা নামাজ শেষে দাফন সম্পর্ন।

0
888
Exif_JPEG_420

আছানুল হক: কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার শিক্ষাবিদ, সমাজ সেবক ও রাজনীতিক প্রফেসর ড.মুহম্মদ ফজলুল হক  সোমবার ১৬ জানুয়ারি সকাল ৮.২৫টায় তাঁর ঢাকার উত্তরাস্থ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে.. রাজেউন)।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র, নাতি-নাতনী ও অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের জামে মসজিদে এবং দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় উত্তরার আজমপুরস্থ নিজ প্রতিষ্ঠিত আমির কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে। উক্ত জানাজায় বিপুল সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, আত্মীয় স্বজন, আমির কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কমচারীগণ শরীক হন। মরহুমের তৃতীয় জানাজা  মঙ্গলবার ১৭ জানুয়ারি সকাল ১২টায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বাগোয়ানস্থ নিজ প্রতিষ্ঠিত ড.মুহম্মদ ফজলুল হক গার্লস কলেজ প্রাঙ্গনে জানাজাই উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া ১ নং আসনের সংসদসদস্য আলহাজ্ব রেজাউল হক চৌধুরী, সাবেক সংসদসদস্য আফাজ উদ্দিন, বি এন পি নেতা আলহাজ্ব আলতাব উদ্দিন, জাপা নেতা আলী আকবর, জাসদ নেতা সরিফুল কবির স্বপন,উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরজ আল মামুন, এবং পরে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় । প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফজলুল হক ছিলেন এদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, সমাজ সেবক ও রাজনীতিক। উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফজলুল হক ১৯৩৭ সালের ১৫ই আগষ্ট বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরে বাগোয়ানে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ্ব আমির উদ্দিন আহমদ। ড. মুহম্মদ ফজলুল হক ছাত্র জীবনে মেধাবী ছিলেন। কলেজ জীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সহ এম এ ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়া তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রী লাভ করেন। তার সুদীর্ঘ ও বৈচিত্রময় কর্মজীবনে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে পাকিস্তান হাই কমিশনে রিক্রুটমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৬৫ সালে পূর্ব পকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১৯৭৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে আমেরিকার একটি কোম্পানীতে কনসালট্যান্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। পরে ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে এটলস ব্যানাস এর পরিদর্শক প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে তিনি মালয়েশিয়ার চীফ প্লানিং ডিভিশনে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কনসালট্যন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি ছাত্র জীবনে ছাত্রদের স্বার্থে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব দেন। তিনি তার ব্যক্তিগত ও সরকারী অনুদানে তাঁর এলাকাসহ কুষ্টিয়ায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা মসজিদ এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। অনেক সময় সরকারী অনুদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুদান দিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে তিনি ড. মুহম্মদ ফজলুল হক গার্লস ডিগ্রী কলেজ ও ডাঃ একরামুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মিসিরুল্লাহ মেমোরিয়াল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বহু গবেষনামূলক প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে ছড়ানো পৃথিবী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও বাংলার মসনদ এবং আমার জীবন স্মৃতি। বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, ইনকিলাবসহ গত দুই দশকে তাঁর অসংখ্য আর্টিকেল ছাপা হয়েছে। তিনি ইউরোপ আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। বর্তমান তিনি আমির গ্রুপ অব কোম্পানী-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানীত উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী ডঃ নাজমা ইয়াসমিন হক রেডিয়ান্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল। ডঃ হক তিন ছেলের জনক। দুই ছেলে আমেরিকা প্রবাসী। বর্তমান তিনি ঢাকার উত্তরাতে বসবাস করেন। তিনি সাপ্তাহিক পলাশীর সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ও ড. মুহম্মদ ফজলুল হক গালর্স ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ডাঃ একরামুল হক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। সাম্প্রতিককালে তিনি গ্রেটার কষ্টিয়া নিউজ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।। সমাজসেবা ও গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখায় গ্রেটার কষ্টিয়া নিউজ-এর পক্ষ তাঁকে ‘কাঙাল হরিনাথ পদক প্রদান করা হয়।

16118470_1156652544432544_500396964_n

LEAVE A REPLY