ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চারলেন প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যানবাহন চলাচলে গতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় কম লাগছে। পাশাপাশি এই মহাসড়কে অতীতের যানজট হ্রাস পেয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রামের ভ্রমণ সময় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত সম্ভব । আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনও সহজতর ও সাশ্রয়ী হয়েছে।
প্রায় ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকায় ১৫টি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এর মধ্যে সড়ক নির্মাণে ১০টি ও সেতু নির্মাণে ৩টি প্যাকেজ তথা পূর্তকাজে ১৩টি প্যাকেজ, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিষয়ে একটি ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগে ছিল একটি প্যাকেজ।
প্রকল্পের আওতায় ২৩টি সেতু, ২৪২টি কালভার্ট, ৩টি রেলওয়ে ওভারপাস, ১৪টি সড়ক বাইপাস, ২টি আন্ডারপাস, ৩৪টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ এবং ৬১টি বাস-বে নির্মাণ করা হয়।
মহাসড়কে ভ্রমণ আনন্দদায়ক, পরিবেশবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন করতে ঋতুর সঙ্গে মিল রেখে সড়কের ৫ মিটার প্রশস্ত ডিভাইডারে নানান প্রজাতির গাছ এবং ঋতুভিত্তিক ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন নিজেদের শ্রম, মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে সড়ক নির্মাণে ১০টির মধ্যে ৭টি প্যাকেজ সম্পন্ন করে প্রকল্পটিকে আলোর মুখ দেখিয়েছে।
এ মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ১৯৩ কিলোমিটার চারলেন প্রকল্পের ১৩৯ কিলোমিটার কাজ করেছে সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন। অবশিষ্ট ৩টি প্যাকেজের ৫৪ কিলোমিটার কাজ করেছে রেজা কনস্ট্রাকশন ও তাহের ব্রাদার্স।
সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সিনিয়র প্রকৌশলী চাও জি বাসসকে বলেন, ২০১০-১৩ মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করার শর্তে ২০১০ সালের ৯ জানুয়ারি সিনোহাইড্রো প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করে। মাটি স্বল্পতা, ভূমি অধিগ্রহণ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ নানা জটিলতার কারণে ২০১৬ সালের ২৩ জুন কাজ শেষ হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ জুলাই তা উদ্বোধন করেন।
তিনি জানান, ৭টি প্যাকেজের চুক্তির পরিমান ছিল ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, তবে চূড়ান্ত খরচ হয়েছে ১ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। চুক্তির আওতায় ২৪টি ফুটওভারব্রীজ ও ১৭০টি কালভার্ট নির্মাণ এবং মহাসড়কের পাশে ২৮ হাজার গাছের চারাও তারা রোপন করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী তাদের কোম্পানী চলতি বছরের ১৭ জুন পর্যন্ত প্যাকেজের আওতাভূক্ত মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করবেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, মহাসড়কের গতি বাড়াতে হলে ধীর গতির যানবাহন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া বড় বড় ট্র্যাঙ্কলরি ও ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। অন্যথায় অতি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বড় বড় গাছের গুড়ি লরিতে তোলার আগেই ফাইল প্রসেস করে অল্প অল্প করে পরিবহনের পরামর্শ দেন।
তাদের প্যাকেজের আওতায় প্রায় ৫শ’ বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে আমাদের কোস্পানী কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশী মানুষ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি আন্তরিক ও বন্ধুভাবাপূর্ণ। কাজ করতে গিয়ে সড়ক ও জনপদের পরামর্শক, কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং শ্রমিকদের সাথে একটা আত্মীক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।’
সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার চেন জেং সেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমাদের বিশেষজ্ঞরা আঁকাবাঁকা সড়ককে যতটুকু সম্ভব সোজা করা হয়েছে। পাশাপাশি যানবাহন চালকসহ সড়ক ব্যবহারকারীদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় সাইন সিগন্যাল স্থাপন করায় মহাসড়কটিতে দুর্ঘটনা বর্তমানে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।’
হানিফ পরিবহনের চালক আব্দুল মালেক বলেন, এই মহাসড়কটি চারলেন করার আগে চট্টগ্রাম যেতে যেখানে ৭/৮ ঘন্টা লাগতো এখন সেখানে ৪/৫ ঘন্টায় যাওয়া যায়। দুর্ঘটনাও অনেক কমে গেছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গুণবতী এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, চারলেনের কারণে চট্টগ্রামের সাথে সড়ক পথে রাজধানীর যোগাযোগ আগের চেয়ে অনেক সহজ, দ্রত, যানজটমুক্ত ও উন্নততর হয়েছে।
ট্র্যাঙ্কলরি চালক আবুল আখের বলেন, ‘চীনের লোকেরা কাজটি করেছে বলে এটি দ্রুত ও মানসম্মত হয়েছে। কারণ তাদের এ ধরনের কাজে অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে।’