সাজেদুল ইসলাম টিটু,পাঁচবিবি(জয়পুরহাট)সংবাদদাতা: জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবিতে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটে নানা অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ শাহিনুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতা ও পেশী শক্তির বলে স্বপদে বহাল থাকায় পাঠদান ব্যহতসহ প্রতিষ্ঠানটিতে বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সচেতন এলাকাবাসীরা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে স্থাপিত জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটে অভিযুক্ত ও সাময়িক বরকাস্তকৃত অধ্যক্ষ শাহিনুর রহমান ২০০১ সালের ২৪ ডিসেম্বর মাসে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে জাল সনদ দেখিয়ে স্ত্রীসহ ২ জন প্রভাষক নিয়োগ, অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতিষ্ঠানের নামে প্রাপ্ত অর্থ সব মিলিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত ২০০৭ সালের ২০ জুন তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতের পরিচালক অধ্যাপক আলী আকবর খানের প্রতিবেদনে জানা যায়, অধ্যক্ষ পদে থাকাকালীন সময়ে শাহিনুর রহমান ২০০৪ সালে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স মাষ্টার্স পাস করা বেগম নাসিমা সুলতানাকে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে (জাল সনদ তৈরি করে) প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে একই সেশনের ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে শাহিন আলম নামে আরও একজনকে নিয়োগ দেওয়ার পর তার কাগজপত্র এমপিও ভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) পাঠানো হলে পূর্বে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বেগম নাসিমা সুলতানার নিয়োগের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পরে। এতে অধ্যক্ষ শাহিনুর রহমান ও প্রভাষক নাসিমা সুলতানার এমপিও বাতিল করাসহ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য ওই প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট অধ্যক্ষ শাহিনুর রহমান ও প্রভাষক নাসিমা সুলতানার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৬০৯/৩/০৭)। অন্য দিকে একই অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে ওই সময় ম্যানেজিং কমিটির সভায় অধ্যক্ষ শাহিনুর ও প্রভাষক বেগম নাসিমা সুলতানাকে সাময়িক বরখাস্ত করায় মাউশি কর্তৃক তাদের এমপিও বাতিল হয়। এ ছাড়া গত ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ শাহিনুরের নিয়োগটি বিধি সম্মত নয় বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া একই প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত অধ্যক্ষ শাহিনুর রহমানের স্ত্রী কম্পিউটার প্রভাষক নুরুন্নাহারের কম্পিউটার সনদ পত্রটি গ্রহণ জাল বলে প্রমানিত হওয়ায় তার নিয়োগটিও বিধিসম্মত নয়। এরপর ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে অধ্যক্ষ শাহিনুর রহমান পরবর্তী ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে আদালতের কোন আদেশ কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের আদেশ-নির্দেশ ছাড়াই অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব নেয়ার আড়াই বছরের মধ্যে ৪ জন প্রভাষক ও স্কুল শাখায় ৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেন বলে নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন। এ দিকে অবৈধ অধ্যক্ষের অধীনে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেতন-ভাতায় স্বাক্ষর না করায় ২ মাস যাবত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিল বেতন বন্ধ থাকায় মাতবেতর জীবন-যাপন করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক- কর্মচারীরা। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বিশৃংখলাবস্থা দেখা দেওয়ায় প্রায় ৬‘শ ছাত্র/ছাত্রীর পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ২২ জন শিক্ষক এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এসব ঘটনার পরও শাহিনুর রহমান কোন খুঁটির জোরে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে বহাল রয়েছেন এমন মন্তব্য করেন একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, উদ্বিগ্ন অভিভাবকসহ উপজেলাবাসী। কোন আদেশ বলে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে অধ্যক্ষ শাহিনুর জানান, ম্যানেজিং কমিটি তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া আর কোনো মন্তব্য করতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর উদ্দিন আল ফারুক বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাকে অধ্যক্ষ পদে বহাল করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে যথাশীঘ্র সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন ইউএনও। গ্রেফতারের বিষয়টি শেরেবাংলা নগর থানা নিশ্চিত করেন।