বাল্যবিবাহ রোধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দিয়েছেন উচ্চ আদালত। প্রতিটি বাল্যবিবাহের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বাররা এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনাররা কেন দায়ী থাকবেন না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রতিটি বাল্যবিবাহ নিজ নিজএলাকায় সম্পন্ন হলে তাঁদের (স্থানীয় জনপ্রতিনিধি) বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পদচ্যুতির আদেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয় গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ রুল দেন।
গত ২৮ অক্টোবর ‘২৪ ঘণ্টায় আট বাল্যবিবাহ বন্ধ’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি নজরে এলে আদালত ওই রুল দেন।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, সুস্পষ্টভাবে এখনো বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকায় প্রশাসন খুব বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারছে না বলেই প্রতীয়মান হয়। এ অবস্থায় আদালত রুল দেন।
জনপ্রশাসন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইনসচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ সচিবকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতের এই রুলের কপি প্রতিটি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠাতে জনপ্রশাসন সচিব এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতে এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল উপস্থিত ছিলেন।
২৬ অক্টোবর বিকেল থেকে ২৭ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত নাটোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ঢাকার সাভারে বাল্যবিবাহ থেকে রেহাই পায় আট কিশোরী। এর মধ্যে নাটোরের লালপুরে এক হবু বর ও বাড়ির মালিককে কারাদণ্ডাদেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুষ্টিয়ায় পাঁচটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়। সাভারে সদর ইউনিয়নের একটি গ্রামে ইউএনওর হস্তক্ষেপে নবম শ্রেণির একজন ছাত্রীর (১৪) সঙ্গে তার বিদ্যালয়েরই এক শিক্ষকের বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। বরিশালে ইউএনওর হস্তক্ষেপে একটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট ২০১৩ সাল থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ শুরু করে। বিভাগীয় কমিশনারদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ঘটনার হিসাব রাখে এই ইউনিট। গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ঘটনা ছিল ১৩ হাজার ৩৩৪টি। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ১৫ হাজার ৭৭৫টি। অবশ্য ২০১৬ সালে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ঘটনা কমে আসে, ৬ হাজার ৩৮৯টি।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) তথ্যমতে, যে দেশগুলোতে বাল্যবিবাহ বেশি, বাংলাদেশ অন্যতম। ২০১৫ সালে ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা জরিপের ফল অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫২ শতাংশ নারীর ১৮ বছর পার হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে। আর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে ১১৬টি। গত বছর মোট ১৭৭টি বাল্যবিবাহ হয়েছিল। সংগঠনটি ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এই হিসাব রাখে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু বেশি হওয়ার একটি কারণ বাল্যবিবাহ। শরীর সন্তান ধারণের উপযুক্ত হওয়ার আগেই তারা গর্ভবতী হয়। আবার এসব কিশোরীর গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুরও মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
সুত্রঃ প্রথম আলো অনলাইন।