কুমারখালী (কুষ্টিয়া)প্রতিনিধি: আজ ৯ ডিসেম্বর। একাত্তরের এইদিনে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়।
৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সকালে শহরে প্রবেশ করে এবং কুন্ডুপাড়ায় রাজাকারদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। রাজাকার কমান্ডার ফিরোজ বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধের খবর জেলা শহর কুষ্টিয়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের কাছে চলে যায়। তারা দ্রুত কুমারখালীতে এসে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে শহরে আতংক সৃষ্টি করে। মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় কম এবং অপর্যাপ্ত অস্ত্র থাকায় তারা স্থান ত্যাগ করে। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা কুমারখালী শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হত্যাযজ্ঞ ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ শুরু করে।
৭ ডিসেম্বরের যুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা তোসাদ্দেক হোসেন ননী মিয়া শহীদ হন। এছাড়া তাদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হন মুক্তিকামি বীর বাঙালি সামসুজ্জামান স্বপন, সাইফুদ্দিন বিশ্বাস, আবদুল আজিজ মোললা, শাহাদত আলি, কাঞ্চন কুন্ডু, আবু বক্কার সিদ্দিক, আহমেদ আলি বিশ্বাস, আবদুল গনি খাঁ, সামসুদ্দিন খাঁ, আবদুল মজিদ ও আশুতোষ বিশ্বাস মঙ্গল।
এরপর ৯ ডিসেম্বর পুনরায় মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের সংগঠিত করে শহরের চারপাশ ঘিরে পাকবাহিনীর ক্যাম্প (বর্তমানে কুমারখালী উপজেলা পরিষদ) আক্রমণ করে। দীর্ঘসময় যুদ্ধের পর পাক বাহিনী টিকতে না পেরে পালিয়ে কুষ্টিয়ার পথে রওনা হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর বহনকারী ট্রেন চড়াইকোল হাতিসাঁকো এলাকায় এলে বিস্ফোরক দিয়ে রেল লাইন উড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। সেদিন রাজাকার কমান্ডার খুশি মারা যায়। শহর হানাদার মুক্ত হওয়ার পর সর্বস্তরের জনতা এবং মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল বের করে। সেদিন থেকেই ৯ ডিসেম্বর কুমারখালী মুক্ত দিবস পালন করা হয়। এ উপলক্ষে কুমারখালী মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১, কুমারখালী প্রেসক্লাবসহ কয়েকটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আজ সকালে শোভাযাত্রা ও বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।