মমতার প্রস্তাবে সোনিয়ার জবাব

0
41
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোনিয়া গান্ধী

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে ভারতের মোদিরাজের অবসানের লক্ষ্যে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘সাম্প্রদায়িক’ মোদি সরকারকে সরাতে ভারতের সব বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোদির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সব বিরোধী দল এক হয়ে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ প্রার্থী দিয়ে লড়লে মোদিকে পরাজিত করা সহজ হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে মমতা তাঁর মোদিবিরোধী লড়াই অব্যাহত রেখেছেন।

লড়াইয়ে সঙ্গী করতে মমতা এর মধ্যে কলকাতায় তেলেঙ্গানা রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল টিআরএসের প্রধান চন্দ্র শেখর রাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কথা বলেছেন গুজরাটের পাতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক প্যাটেলের সঙ্গে, কলকাতায়। চন্দ্রশেখরের সঙ্গে বৈঠকে মোদিবিরোধী আঞ্চলিক দলের একটি ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ নেন এই দুই নেতা। মমতা চাইছেন ফেডারেল ফ্রন্টের মাধ্যমে মোদিকে পরাস্ত করতে।

একই লক্ষ্য নিয়ে মমতা গত সোমবার দিল্লিতে হাজির হন। কথা বলেন বিরোধী নেতাদের সঙ্গে। কথা বলেন বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গেও। এঁদের মধ্যে ছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা, অরুণ শৌরী ও যশোবন্ত সিনহা। এ ছাড়া দিল্লির সংসদ ভবনে মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ারের এনসিপি, শিবসেনা, বিহারের আরজেডি, তেলেঙ্গানার টিআরএস সাংসদদের সঙ্গে কথা বলেন। কাশ্মীরের ফারুক আবদুল্লাহর সঙ্গেও কথা হয়। সবার কাছে মমতা তুলে ধরেন ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের একটি চিত্র। মমতার লক্ষ্য, বিভিন্ন রাজ্যে ফেডারেল ফ্রন্টের আসনসংখ্যা যদি কংগ্রেসের আসনসংখ্যার বেশি হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে মমতা চান, মোদিকে সরাতে কংগ্রেস ফেডারেল ফ্রন্টকে সমর্থন করুক। তবে মমতা যেসব নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা সবাই একবাক্যে বলেছেন, মোদিকে সরাতে কংগ্রেসকে চাই। কংগ্রেস ছাড়া মোদিকে সরানো কঠিন।

অবশ্য মমতা আগেভাগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে রাজি নন। তিনি চাইছেন, ২০১৯ সালের ভোটের পর এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হোক, যেখানে তাঁর প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্টের আসনসংখ্যা কংগ্রেসের চেয়ে বেশি হয় এবং কংগ্রেসও ফেডারেল ফ্রন্টকে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়। যেমনটা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর, এইচডি দেবগৌড়া, আই কে গুজরালের ক্ষেত্রে। সেই লক্ষ্য নিয়েই মমতা এগোতে শুরু করছেন।

মমতার কথা—যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, সেই দলের প্রার্থী লড়বেন বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অর্থাৎ, ‘একের বিরুদ্ধে এক’ প্রার্থী নিয়ে লড়তে হবে বিরোধী দলকে। আর এটা হলে বিজেপি পরাস্ত হবে দেশ থেকে। দিল্লিতে মমতা বলেছেন, কর্ণাটকে শক্তিশালী কংগ্রেস, সুতরাং সে রাজ্যে জিতুক কংগ্রেস। আবার উত্তর প্রদেশে শক্তিশালী সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টি। সেই রাজ্যে তারা জিতুক। মহারাষ্ট্রে শারদ পাওয়ারের এনসিপি এবং বিহারে লালু প্রসাদের আরজেডি শক্তিশালী বিধায় তারা ওই রাজ্যে জিতুক। এ লক্ষ্যে মমতা দিল্লিতে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন।

এসবের মাঝেই মমতা গতকাল বুধবার রাতে এক বৈঠক করেন ইউপিএর চেয়ারপারসন ও কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। সন্ধ্যার পর তিনি সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে হাজির হন। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের দুই সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। আধা ঘণ্টার বৈঠক করেন তাঁরা। মমতার প্রস্তাব শুনে সোনিয়া গান্ধী পাল্টা জবাবে বলেছেন, ‘বিজেপিকে হটাতে গেলে দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতৃত্বে এগিয়ে এসে লড়তে হবে।’

সোনিয়া চান, মমতাও তাদের জোটে শামিল হোন। তবে মমতা এখনো কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে মেনে নিতে পারছেন না। সোনিয়ার সঙ্গে মমতা যেভাবে মিশছেন, সেভাবে রাহুলের সঙ্গে তাঁর জমছে না। সোনিয়া মমতাকে এদিন জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু তিনি জানিয়ে দেবেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে।

LEAVE A REPLY