মিজানুর রহমান নয়ন,কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ যে বয়সে রাব্বির স্কুলে যাওয়ার কথা,বিকালে সাথীদের নিয়ে খেলার কথা।পড়াশোনা করে বড় হওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকলেউ সেই বয়সেই রাব্বি অর্থের কাছে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে নিজের ও পরিবারের একমাত্র সদস্য গর্ভধারিনী মা এর বেঁচে থাকার উপকরন জোগাতে বই ছেড়ে বাদামের ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকে স্কুলের সামনে।ওর বয়সী ছেলে মেয়েরাই আবার ওর কাছ থেকে বাদাম কেনে।
ঘটনাটি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের চৌরঙ্গী বাজার এলাকার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,প্রায় ১১-১৩ বছর বয়সী রাব্বি বাদামের ঝুড়ি নিয়ে বসে আছে চৌরঙ্গী মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে।ওর সমবয়সী ছেলে মেয়েরা ওর কাছ থেকে বাদাম কিনছে। রাব্বি সুযোগ পেলেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে স্কুলের দিকে,সমবয়সী সহপাঠীদের দিকে।
এসময় রাব্বি বলেন,আমরা গরিব মানুষ,আমার বাবা নেই, পরিবারে শুধু আমি আর মা।পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি আমি।মা বাদাম ভাঁজে আর আমি সেই বাদাম বিক্রি করে সংস্যার চালায়।দিনে কত টাকা আয় হয়?এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন প্রতিদিন ১৫০ -২০০ টাকার মত হয়,তবে মাঝে মাঝে ৪০-৫০ টাকাও বটে।তা দিয়েই চাল ডাল সহ নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানো আর কিস্তি চালায়।
তুমি কি পড়াশোনা করতে চাও?এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে,আমি গরিব মানুষ।আমার বাবা নেই,কে পড়াবে আমাকে?
তবে সুযোগ পেলে পড়তে চাই রাব্বি,আর দশটা শিশুর মত পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হয়ে মায়ের স্বপ্ন পুরন করতে চাই রাব্বি।নিজের ও দেশের কল্যানে কাজ করতে চাই।এমনটাই অভিমত প্রকাশ করেন রাব্বি।
এবিষয়ে রাব্বির মা রোকেয়া (৩৫) বেগম বলেন, অর্থের অভাবে ও পরিবারের খরচ মেটাতে বই ছেড়ে বাদামের ঝুড়ি তুুুলে দিয়েছি রাব্বির হাতে।তবে পড়াশোনা করা ওর খুব ইচ্ছা।তিনি বলেন বিয়ের পর থেকেই স্বামী হাফিজুল ঠিকমত সংসারের খরচ দিতো না। রাব্বি পেটে এলে একদিন আমাকে বাবার বাড়ি চৌরঙ্গীতে পাঠিয়ে দেয়। এর ফাঁকে হাফিজুল আরেকটা বিয়ে করে এবং হাফিজুলের সকল সম্পত্তি হাফিজুলের সৎ ভাইয়ের কাছে বিক্রি করে কাউকে না জানিয়ে ২য় স্ত্রীকে নিয়ে চলে যায়।
অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি আরো বলেন “আমাদের পাশে দাঁড়াবার আজ কেউই নেই। আজ আমার ছেলের বয়স তের বছর। কি ওর ভবিষ্যৎ। কি হবে ওর। ওর বাবাও নেই যে কাজ করে সংসার চালাবে। আমি একা মেয়ে মানুষ হয়ে কিভাবে সংসার চালাবো? ।
আমি স্থানীয় প্রতিনিধি,প্রশাসন,সমাজের বিত্তবান ও বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা’র কর্তৃপক্ষকে রাব্বির স্বপ্ন পুরোনে এগিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।