তেলের উৎপাদন কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে বিশ্বের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক। সংগঠনটি দৈনিক উৎপাদন ৩ কোটি ২৫ লাখ থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এর ফলে ২ লাখ থেকে সাড়ে ৭ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত কমানো হচ্ছে। এদিকে ওপেকের ঘোষণার পরপরই বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। এদিন ২ ডলার বেড়ে ৪৭ ডলারে লেনদেন হয়েছে।
বুধবার জ্বালানি তেল উত্তোলন ও উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেকের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে উৎপাদন কমানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত আটবছরের মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো এ দেশগুলো উৎপাদন কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে ২৬ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জ্বালানি ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত আসে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, অধিক উৎপাদন ও ক্রমহ্রাসমান চাহিদার কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম উঠানামার পরিপ্রেক্ষিতে ওপেকভুক্ত দেশগুলো অনেকদিন থেকেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ইরান ও সৌদি আরবের বিরোধিতার কারণে এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। আগামী নভেম্বরে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং একইসঙ্গে পণ্যটির দাম স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওপেক প্রেসিডেন্ট ও কাতারের জ্বালানিমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালেহ আল-সাদা বলেন, আগামী নভেম্বরে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ওপেকভুক্ত দেশগুলো দৈনিক তিন কোটি পঁচিশ লাখ থেকে তিন কোটি ত্রিশ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করবে। বর্তমানে দৈনিক তিন কোটি বত্রিশ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান জাইগানস বলেন, প্রাথমিকভাবে হলেও ওপেক একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে চুক্তিটির বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ওপেকের পরবর্তী বৈঠকে নেয়া হবে। নাইজেরিয়ার তেলমন্ত্রী আইবি ক্যাসিকিউ এ সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে আলজেরিয়ার তেলমন্ত্রী নোরিন বোয়ার্ফা বলেন, সংরক্ষণের বিপরীতে এটা ওপেকভুক্ত দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ একটি সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন কমানোর ঘোষণার এক দিনের মধ্যে বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। এ দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। এর আগে উদ্বৃত্ত উৎপাদন ও ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমিয়েছিল ওপেকভুক্ত দেশগুলো।
ঘোষণার পরপরই ব্রেন্ট জাতীয় অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫.৯ শতাংশ বেড়েছে। শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। ওয়াল স্ট্রিটে জ্বালানি শেয়ারের দাম এক দিনে বেড়েছে ৪ শতাংশ। গত জানুয়ারির পর এটাই এ খাতে একদিনে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। অবশ্য ওপেকের এ উৎপাদন সীমা কমিয়ে আনার ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উৎপাদন কমবে এক শতাংশেরও কম। তারপরও শুধু ঘোষণাটিই বাজারে ভালো প্রভাব ফেলেছে। তবে সেটা স্বল্পমেয়াদি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। উৎপাদন সীমা হ্রাস দীর্ঘমেয়াদে দামের ওপর খুব কমই প্রভাব ফেলতে পারবে বলেই মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
সুত্র: যুগান্তর।