তামাকে উচ্চ কর বাঁচাবে সাড়ে চার কোটি প্রাণ

0
182

আগামী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ থেকে তামাক সম্পূর্ণভাবে নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে তামাকের আবাদ, উত্পাদন ও এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, তামাক ব্যবহারে বাংলাদেশ এখনো উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড লাঞ্জ ফাউন্ডেশনের টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশে তামাক থেকে সৃষ্ট রোগে ৯২ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। প্রতিদিন ১.৬৪ লাখ শিশু এবং ২.৫৫ কোটি বয়সী মানুষ তামাক ব্যবহার করে। একুশ শতকে তামাকের কারণে এ দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যাবে।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক থেকে মানুষকে বিরত রাখতে সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হচ্ছে তামাকজাত পণ্যের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তামাকপণ্যের ওপর উচ্চ কর আরোপ করলে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমবে। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় কমপক্ষে তিন কোটি ৫০ লাখ থেকে চার কোটি ৫০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচবে, যা এ অঞ্চলের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় বয়সী মানুষের সংখ্যা ১১০ কোটি। এর মধ্যে প্রায় ১৭ কোটি ধূমপায়ী। এদের বেশির ভাগই ভারতের। গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) বৈশ্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।

এ চুক্তির আওতায় তামাকের ওপর উচ্চ কর আরোপ, জনসমাগমের স্থান ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা, সতর্কবার্তা প্রচার, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধকরণ এবং যারা ধূমপান ছাড়তে চায় তাদের সেবা ও সহযোগিতা দিতে হবে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেন টরন্টোর সেন্ট মিখায়েলস হাসপাতালের সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের পরিচালক প্রভাত ঝাঁ। তিনি বলেন, গবেষণায় ৩৫ বছরের নিচে ১৪ কোটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের ধূমপায়ীকে হিসাব করা হয়েছে, এদের তিন কোটি ৩০ লাখ বর্তমানে ধূমপায়ী। এ ছাড়া ২৫ বছরের কম বয়সী ১০ কোটি ৭০ লাখ এখনো ধূমপান শুরু করেনি, কিন্তু ভবিষ্যতে করতে পারে।

প্রভাত ঝাঁ আরো বলেন, ধূমপায়ীদের বড় অংশকে যদি ধূমপান থেকে বিরত রাখা না যায় তবে দক্ষিণ এশিয়ায় ১৪ কোটি তরুণ এবং ভবিষ্যতের ধূমপায়ী মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। সাত কোটির মৃত্যু হবে ৭০ বছর বয়সের আগে। তবে ৪০ বছর বয়সের আগে যদি ধূমপান ছাড়ানো যায় তবে এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু থেকে প্রায় সবাইকে রক্ষা করা যাবে। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশে অশিক্ষিত শ্রেণির একটি বড় অংশ সিগারেটের জায়গায় বিড়ি খায়।

প্রভাত ঝাঁ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, অথচ ছাড়ার হার খুবই কম। কিন্তু তামাক চুক্তিটি যদি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, বিশেষ করে উচ্চ কর আরোপ করা গেলে ধূমপায়ীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে। ফলে প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ থেকে চার কোটি ৫০ লাখ প্রাণ বাঁচানো যাবে।

ইতিপূর্বে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতসহ এশিয়ার পাঁচ দেশে যদি কর আরোপের মাধ্যমে সিগারেটের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানো যায়, এ ক্ষেত্রে কর ৭০ থেকে ১২২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে। তা করা গেলে কমপক্ষে ছয় কোটি ৭০ লাখ বর্তমান ও ভবিষ্যতের ধূমপায়ী কমবে। একই সঙ্গে তামাকের কারণে মৃত্যু কমবে দুই কোটি ৭০ লাখ। এমনকি এতে অতিরিক্ত ২৪ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আসবে।

চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত ২৫ বছরে ধূমপান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। সিগারেটের কারণে বিশ্বজুড়ে ১০ জনের মধ্যে একজন মারা যাচ্ছে। এর অর্ধেকই ঘটছে চীন, ভারত, আমেরিকা ও রাশিয়ায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো কোনো দেশ উচ্চ কর আরোপ, সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তা এবং প্রচারকাজের মাধ্যমে সিগারেটে আসক্তি কিছুটা কমিয়ে আনতে পেরেছে। তবে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনে ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। নারী ধূমপায়ীদের সংখ্যাও কম নয়। ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন নারী সিগারেটে আসক্ত।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আশার বিষয় হচ্ছে, দেশে তামাকের আবাদ ও ধূমপান নিরুৎসাহিতকরণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। আগে যারা তামাক চাষ করত তাদের এখন বিকল্প চাষে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, তামাক আবাদের জমি কমে এলেও উত্পাদন কমছে না বরং বাড়ছে। কারণ কৃষকরা এখন হাইব্রিড বা উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার করছে। এ বছর তামাক উত্পাদন এক লাখ টন হবে বলে জানা যায়। মানি কন্ট্রোল, বিবিসি।

সুত্রঃ কালের কন্ঠ অনলাইন।

LEAVE A REPLY