বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান জয়লাভ করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন চিত্রনায়ক সাইমন, তারপরই রয়েছেন রোজিনা। ভোটপ্রাপ্তির দিক থেকে তিন নম্বরে রয়েছেন সুশান্ত। শুধু জয় নয়, ভোটপ্রাপ্তির দিক থেকে তিনি সবাইকে চমকে দিয়েছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রতি টান ও ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি অপারগতার কারণে মুম্বাইয়ের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন এই অভিনেতা। খল চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তব জীবনে একবারে সহজ সরল ও বিনয়ী সুশান্ত। এফডিসিতে সুশান্তর এই ইমেজটাই তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে।
দেশীয় চলচ্চিত্রে কাজ করার পাশাপাশি সুশান্ত পেয়েছেন বলিউড ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব। সেসবকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সুশান্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি আসলে ভিন্ন সংস্কৃতিকে পছন্দ করি না কিংবা আমাকে টানে না, তাহলে আমি কীভাবে কাজ করব? চাঙ্কিপাণ্ডে, শক্তি কাপুর, মমতা কুলকার্নি, মিঠুন চক্রবর্তী বিভিন্ন সময় আমাকে বলেছেন আমি না করেছি। আসলে টানেনি।
সুশান্ত বাংলা চলচ্চিত্রে এসেছেন ১৯৮৬ সালে। তাকে অভিনয়ে নিয়ে এসেছেন মাসুম পারভেজ রুবেল। এখন পর্যন্ত অভিনয় করেছেন এক হাজারেরও বেশি ছবিতে। উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো- বিচ্ছু বাহিনী, চারিদিকে অন্ধকার, আমি জেল থেকে বলছি, মুসা ভাই, তেজিপুরুষ, মান্নাভাই, রক্ত চোষা, ফুটপাতের শাহেনশাহ, মায়ের কান্না, চোখের পানি, অমর আকবর, অহংকার, আমার কোনো টেনশন নাই এর মতো এক হাজার ছবিতে অভিনয় করেছেন সুশান্ত। এগুলোর মধ্যে কখনো একক খল কখনো মিশা কিংবা অন্য কোনো খল অভিনেতার অধীনেও অভিনয় করেছেন।
অভিনয়ের জন্য বারবার চাকরি ছেড়েছেন সুশান্ত। সাতকানিয়া এডিবল অয়েল, অ্যাপোলো ইস্পাতে এমনকি অনন্ত জলিলের এজেআই গ্রুপেও চাকরি করেছেন সুশান্ত। কিন্তু অভিনয় তাকে বারবার চাকরি থেকে ছাড়িয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়েছে। তাই লোভনীয় অফারের চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন এক কথাতেই। অভিনয়ের সূত্র ধরেই অনন্ত জলিলের সাথে পরিচয় হয় সুশান্তর। জলিলের অনুরোধে ফ্যাক্টরিতে যোগ দেন ২০০৯ সালে। সেই চাকরি ছেড়ে চলে এসেছেন।
এফডিসিতে সুশান্ত বেশ জনপ্রিয়। যেখানে সবাই তারকা শিল্পীদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন, সেখানে সুশান্তর মতো খল চরিত্রের অভিনেতারা আলো পাচ্ছিলেন না। এমনকি কোনো গণমাধ্যমে কখনো সুশান্তরা কখনোই শিরোনামের ধারেকাছে ভেড়েননি। সুশান্ত আক্ষেপ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, সাংবাদিকরা হয়তো আমাদের যোগ্য মনে করেননি তাই আমাদের সংবাদে আনেননি। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, ৩১-৩২ বছর ধরে ফিল্মে কাজ করছি কেউ বলতে পারবে না কারো ক্ষতি করেছি। আমি আমার কাজের ফলাফল পেয়েছি।
সুশান্ত বলেন, আমি জয়ী হব, এটা আমার বিশ্বাস ছিল। নির্বাচনের আগে সবারই বিশ্বাস থাকে সে জয়ী হবে। কিন্তু আমি অন্ধবিশ্বাস করিনি। আমি জানি আমাকে প্রায় শিল্পীরাই ভালোবাসেন। আমি কখনোই অন্যায় করি না, মানুষের ক্ষতি করি না। আমি বাস্তবে ভিলেন, অভিনয়ের জন্য সেটা, কিন্তু বাইরে তো আমি মানুষ। সবাই আমাকে পছন্দ করে কারণ আমি বিনয়ের সাথে কথা বলি। আমি মানুষ তাই বিনয়ী হতে শিখেছি, একটু বিনয় মানুষকে অনেক ওপরে নিয়ে যায়।
শিল্পী সমিতির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এখন তার ক্ষমতা যতটুকু থাকবে, সুযোগ যতটা হবে ততটাই শিল্পীদের কল্যাণে নিবেদন করবেন সুশান্ত।
সুত্রঃ কালের কন্ঠ অনলাইন।